ইনফোমাইগ্রেন্টসের প্রতিবেদন
দক্ষিণ-পূর্ব লিবিয়ার কুফরা শহরে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১০৭ জন অভিবাসীকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা হয়েছে৷ সোমবার নিরাপত্তা বাহিনীর এক মুখপাত্র এ কথা জানিয়েছেন৷
দক্ষিণ-পূর্ব লিবিয়ার কুফরা শহরে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১০৭ জন অভিবাসীকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করা হয়েছে৷ সোমবার নিরাপত্তা বাহিনীর এক মুখপাত্র এ কথা জানিয়েছেন৷
রাজধানী ত্রিপোলি থেকে কুফরা প্রায় এক হাজার ৭১২ কিলোমিটার (এক হাজার ৬৪ মাইল) দূরে৷ বেনগাজির অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মুখপাত্র ওয়ালিদ আলরাফি বলেছেন, কয়েকজন অভিবাসীর মতে, তাদের সাত মাস পর্যন্ত বন্দি করে রাখা হয়েছিল৷ তিনি জানান, ‘‘অভিবাসীরা ইউরোপে যেতে চেয়েছিলেন৷’’
তারা সাব-সাহারান আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক৷ যদিও বন্দিদশায় থাকা অভিবাসীদের মধ্যে মূলত সোমালিয়ার নাগরিকেরাই ছিলেন৷
আলরাফি জানান, ‘‘আমরা গত (রোববার) রাতে কুফরা শহরের কেন্দ্রস্থলে গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়েছি৷ নারী, শিশু এবং বৃদ্ধসহ অনিয়মিত অভিবাসীদের উদ্ধার করি৷ এদের কারো কারো শরীরে নির্যাতন ও গুলির ক্ষত রয়েছে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অভিবাসীদের সবাইকে ‘অনিয়মিত’ অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে এমন সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷’’
অভিবাসীদের আটকে রাখা বাড়িটি ভেঙে ফেলার ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করেছে সিআইডি৷ বেশ কিছু্ ফুটেজে অভিবাসীদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে৷ কিছু অভিবাসীকে ত্রাণকর্মীরা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই ফুটেজও দেখা গেছে৷
আলরাফির মত, কয়েকজন অভিবাসীর ‘‘স্বাস্থ্যের অবস্থা সংকটময়৷’’’
২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক রুট পেরিয়ে ইউরোপমুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে লিবিয়া অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠেছে৷
এছাড়াও লিবিয়ার তেল-নির্ভর অর্থনীতিও অভিবাসীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়৷
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি লিবিয়ার ১০০টি মিউনিসিপ্যালিটি (পৌরসভা) থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, তেল সমৃদ্ধ লিবিয়ায় ৪৩টি দেশের সাত লাখ চার হাজার ৩৬৯ জন জন অভিবাসী বাস করেন৷
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা চলতি বছরের মার্চে জানিয়েছিল, সিআইডি দক্ষিণ-পশ্চিম লিবিয়ার একটা গণকবরে অন্তত ৬৫ অভিবাসীর মৃতদেহের সন্ধান পেয়েছে৷
এপ্রিলে নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘের বিশেষ দূত আবদুল্লাহ বাথিলি বলেছিলেন, ‘‘আমি অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’
এপ্রিলেই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গিতেরেসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বাথিলি৷ তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে নির্বিচারে আটকে রাখা অভিবাসীদের সঙ্গে মর্মান্তিক আচরণের কথা জানা গেছে৷’’
অসহায় মানুষকে রক্ষা করতে লিবিয়ান কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপের উপর জোর দিয়েছিলেন সাবেক বিশেষ দূত৷
লিবিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ
এর আগে, ত্রিপোলিতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সদর দপ্তরের বাইরে একটি অবস্থান বিক্ষোভ জড়িত থাকার পরে আশ্রয়প্রার্থীদের ১৮ মাসের জন্য আটক করা হয়েছিল৷ সংস্থার কাছে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করার পরে স্থানান্তর সহায়তার দাবি জানিয়েছিলেন তারা৷
২০২৩ সালের ১০ মার্চ লিবিয়া হয়ে ইটালির দিকে আসার সময় ১০৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে ইমার্জেন্সি পরিচালিত ‘লাইফ সাপোর্ট’ জাহাজের উদ্ধারকর্মীরা৷ প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সময় লিবিয়া থাকাকালীন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন তারা৷
অভিবাসনপ্রত্যাশী দলের একজন নারী জানিয়েছিলেন, লিবিয়ার একটি কারাগারে তাকে সাত মাস আটকে রাখা হয়৷ সেখানে বারবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি৷ ইউরোপে অভিবাসনের আশায় কোনো নারী একা লিবিয়ায় এলে ধর্ষণের শিকার হতে হয় বলেও জানান তিনি৷
২০২৩ সালের নভেম্বরে লিবিয়ায় তিন জন নারী ও দুই জন পুরুষ অভিবাসীর উপর মানব পাচারকারীদের সহিংস নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করে অভিবাসীদের পরিচালিত সংগঠন ‘রিফিউজিস ইন লিবিয়া৷’