ডেস্ক রিপোর্ট
ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠাতে তৎপর যুক্তরাজ্য৷ এ লক্ষ্যে দেশজুড়ে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের আটক করতে শুরু করেছে পুলিশ৷ এমন বাস্তবতায় আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন, আবার অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছেন আয়ারল্যান্ডে৷
রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে এই ধরপাকড়৷ পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে অন্তত একজন আশ্রয়প্রার্থী বেছে নিয়েছেন অনশন কর্মসূচি, অপর একজন দিয়েছেন আত্মহত্যার হুমকি৷
বেসরকারি সংস্থা অ্যাসাইলাম ম্যাটারস-এর পরিচালক লু ক্যালভে বলেছেন, “সম্মুখ সারির অধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, আটক এড়াতে নিজ নিজ আশ্রয়স্থল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আশ্রয়প্রার্থীরা৷ এতে তারা আরো বেশি দুর্দশার মুখে পড়বেন এবং শোষণের ঝুঁকিও বাড়বে৷’’
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালে যারা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন তাদেরকেই শুরুতে রুয়ান্ডা পাঠানো হবে৷ কিন্তু তারপরও আটক হওয়ার আতংকে আছেন এক দশক আগে বেলারুশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসা এক আশ্রয়প্রার্থী৷
লন্ডনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কেন্দ্রটিতে তাকে রিপোর্ট করতে হয়, সেখানকার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তিনি৷ বলেন, “আমি ভিতরে চলে গিয়েছিলাম এবং মোটেও লাইন ধরতে হয়নি৷ এত বছর ধরে আমি রিপোর্ট করছি, এমন অবস্থা আমি এর আগে কখনও দেখিনি৷’’
অপর এক আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডা যাওয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে৷ তবে এখনও (৭ মে সকাল পর্যন্ত) আটক হননি তিনি৷ তার পরিচিতজনেরা তাকে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ এ বিষয়ে পরিচিতদের বেশ কয়েকজন তাকে ফোন দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
একজন সিরীয় শরণার্থী বলেছেন, তিনি তার আশ্রয়প্রার্থী বন্ধুদেরকে রুয়ান্ডায় যেতে না চাইলে লুকিয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন৷
তিনি বলেন, আমি ২০২০ সালে একজন আশ্রয়প্রার্থী ছিলাম৷ তখন হোম অফিস (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) ব্রেক্সিট শুরু হওয়ার আগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে যতটা সম্ভব আশ্রয়প্রার্থীদের ডিপোর্ট করার চেষ্টা করছিল৷ ওইসময় অনেক আশ্রয়প্রার্থী আত্মগোপনে ছিলেন৷ আমি দেখতে পাচ্ছি, রুয়ান্ডার কারণে সেটি আবার ঘটছে৷’
নতুন আইন এবং রুয়ান্ডায় পাঠানোর হুমকির পরও আশ্রয়প্রার্থীরা ফরাসি উপকূল থেকে বিপজ্জনক চ্যানেল ক্রসিং অব্যাহত রেখেছেন৷ এই বছর এখন পর্যন্ত আট হাজারেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী এসেছেন ব্রিটিশ উপকূলে৷ চলতি বছরে ১ মে একদিনে রেকর্ড সংখ্যক ৭১১ জন আশ্রয়প্রার্থী পৌঁছেছেন ব্রিটিশ উপকূলে৷
অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ইন্টারন্যাশনাল প্রোটেকশন অ্যাকোমেডেশন সার্ভিসেস কেন্দ্রের বাইরে আশ্রয়প্রার্থীদের তাঁবুগুলো উচ্ছেদ করেছে কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু দিন না পেরোতেই আবারো সেখানে তাঁবু টানিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকতে দেখা গেছে৷
যুক্তরাজ্যে আটক অভিযান শুরুর পর আশ্রয়প্রার্থীদের ভিড় বেড়েছে আয়ারল্যান্ডেও৷ দেশটির বিচারমন্ত্রী হেলেন ম্যাকেন্টি সম্প্রতি বলেছেন, নতুন করে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ৮০ শতাংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আয়ারল্যান্ডে ঢুকেছেন৷ বর্তমানে সংখ্যাটি ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে অনুমান করছে ডাবলিন৷
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বিচারমন্ত্রী নাওমি লং বলেছেন, আয়ারল্যান্ডের দেয়া এসব পরিসংখ্যানকে স্বীকৃতি দিতে চান না তারা৷
লন্ডনের একটি হোম অফিস রিপোর্টিং সেন্টারে আতংক নিয়ে হাজিরা দিতে এসেছেন এক ইথিওপিয়ান আশ্রয়প্রার্থী৷ রুয়ান্ডায় পাঠানোর তালিকায় তার নাম রয়েছে৷ রিপোর্টিং কেন্দ্রে যখন এসেছিলেন, আটক হওয়ার ভয় ছিল তার মধ্যে৷ তিনি বলেন, ‘‘খুব চিন্তিত’’ ছিলাম৷ওই আশ্রয়প্রার্থী আরো বলেন, ‘‘আমার আসলে কোনো কিছু ভালো লাগছে না৷ কোনোকিছুই ঠিক মনে হচ্ছে না৷’’
১৪ বছর আগে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন একজন ইরানি কুর্দি৷ তিনি বুঝতেই পারছেন না, কীভাবে আশ্রয়প্রার্থীদের এমন একটি দেশে পাঠানো যেতে পারে যে দেশ থেকে তারা আসেননি৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি তো রুয়ান্ডা থেকে আসিনি৷ আপনি কীভাবে আমাকে রুয়ান্ডায় পাঠাতে পারেন? আমি তো রুয়ান্ডায় যেতে চাই না৷’’
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস।