অভিবাসনঅনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ: লেবাননকে শত কোটি ইউরো দেবে ইইউ

অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ: লেবাননকে শত কোটি ইউরো দেবে ইইউ

- Advertisment -spot_img

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

লেবাননের জন্য ১০০ কোটি ইউরোর অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ দেবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এর বেশিরভাগটাই ইউরোপমুখী অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে খরচ হতে পারে৷

২ মে সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বৈরুত সফরে গেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডেয়ার লেয়েন৷ সেখানেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘‘লেবাননের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং সুরক্ষায় অবদান রাখতে প্রায় ১০০ কোটি ইউরো আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে৷’’

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এবং সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্তোদৌলিদেসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে লেবাননের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন উরসুলা৷ তিনি বলেন, ইইউ ‘‘লেবানন এবং দেশটির জনগণকে সমর্থন করে৷’’

ইইউ-র সীমানা নিয়ন্ত্রণ
তিনি বলেন, ‘আমি লেবাননের জন্য ১০০ কোটি ইউরোর আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারি, যা চলতি বছর থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে দেয়া হবে৷’

শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংস্কারের মতো মৌলিক পরিষেবাগুলোকে শক্তিশালী করতে কিছু সহায়তা ব্যবহার করা হবে৷

বার্তাসংস্থা এপি জানায়, তহবিলের সিংহভাগ অর্থাৎ ৭৩.৬ কোটি ইউরো লেবাননের দুর্দশাগ্রস্ত গোষ্ঠীগুলো এবং সিরিয়ার শরণার্থীদের সাহায্যে ব্যবহার করা হবে৷

এপি জানিয়েছে, সাইপ্রাস সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে লেবাননের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর অবকাঠামো, সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য আরো ২০ কোটি ইউরো ব্যবহার করা হবে৷

লেবাননের মৎস্যজীবীদের বোঝানো হবে যাতে মানবপাচারকারীদের কাছে তারা কোনোভাবেই নৌকা বিক্রি না করেন৷ এই খাতেও অর্থ ব্যয় করবে ইইউ, তবে অর্থের পরিমাণ নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি৷

২০১১ সাল থেকে লেবাননকে ৩০০ কোটি ইউরোরও বেশি সহায়তা দিয়েছে ইইউ৷ এর বেশিরভাগই সিরীয় শরণার্থীদের অভ্যর্থনার জন্য দেয়া হয়েছিল৷ তবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং অভিবাসী পাচার রোধ করার জন্যও আর্থিক সাহায্য করেছে ২৭ দেশের এই জোটটি৷

মিশর, তিউনিশিয়া এবং মৌরিতানিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে এবং অনিয়মিত অভিবাসীদের ইউরোপমুখী যাত্রা ঠেকাতে সম্প্রতি একাধিক চুক্তি করেছে ইইউ৷ লেবাননের জন্য তহবিল বরাদ্দেরও মূল কারণ অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা৷

সাইপ্রাস এবং ইটালি যাওয়ার রুট ‘ব্লক’ করা

সম্প্রতি আরো বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী (বেশিরভাগই সিরীয় শরণার্থী) নৌকায় লেবানন ছেড়ে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরের সাইপ্রাসে পাড়ি জমাচ্ছেন৷

বছরের শুরু থেকে প্রায় চার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী সাইপ্রাসে পৌঁছেছেন৷ ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৭৮৷

সাইপ্রাস মিডিয়া গত বুধবার (১ মে) জানিয়েছে, ১৫ জন সিরীয় অভিবাসনপ্রত্যাশী সেদিন ভোরে একটি স্পিড বোটে সাইপ্রাস পৌঁছেছিলেন৷ ১৫ জনের মধ্যে চারটি শিশুও ছিল৷

সাইপ্রাস মেল জানায়, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা প্রথমে তুর্কি-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লিমনিটিস এলাকায় পৌঁছান৷ তারপর পায়ে হেঁটে সাইপ্রাসের সীমানায় ঢোকেন৷

সাইপ্রিয়ট সরকার জানিয়েছে, অভিবাসী আগমন বেড়েই চলেছে৷ ইউরোপীয় কমিশনকে এ বিষয়ে পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে আসছেন তারা৷ প্রসঙ্গত, সাইপ্রাস এপ্রিল মাসে ঘোষণা করেছে সিরিয়া থেকে আসা কোনো ব্যক্তির আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া করা হবে না৷

সিরিয়ার শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে সিরীয় শরণার্থীদের উপর বৈষম্যের ঘটনা বেড়ে চলেছে লেবাননে৷ দেশটিতে প্রায় ১৫ লাখ সিরীয় শরণার্থী রয়েছেন৷

সংবাদ সম্মেলনে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মিকাতি বলেন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে তার দেশ সবচেয়ে বড় ‘‘বোঝা’’ বহন করেছে৷ তিনি সতর্ক করে বলেন, লেবানন ‘‘সিরিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার প্রবেশদ্বার’’ হয়ে উঠলে তার দেশে সামাজিক উত্তেজনা বাড়বে৷

ইইউর সহায়তা প্যাকেজের প্রশংসা করে মিকাতি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা লেবাননের উপর নির্ভরশীল, আবার উল্টোটাও সত্যি৷

তার কথায়, ‘‘বাস্তুহারা মানুষদের সমস্যা বাড়তে থাকলে তা শুধু লেবাননেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং ইউরোপে প্রসারিত হয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংকটে পরিণত হবে৷’’

দীর্ঘদিন ধরে সিরীয় শরণার্থীদের অন্য দেশে পুনর্বাসন করতে চেয়ে কিংবা সিরিয়ায় ফেরত পাঠাতে চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আসছে লেবানন৷

গত এক বছরে হাজার হাজার শরণার্থীকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠিয়েছে লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনী৷ মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এর ফলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷

সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সিরীয় শরণার্থীরা বৈষম্যমূলক কারফিউসহ একাধিক হুমকির মুখে পড়ছেন৷ তাদের উপর বেআইনি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে৷

ইইউ কমিশনের প্রধান সরাসরি হয়তো এই উদ্বেগের সমাধান করেননি৷ তবে তিনি বলেন, সিরিয়ায় স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ইইউ৷

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest news

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অভাবে ঝুঁকির মুখে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

ডেস্ক রিপোর্ট যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় আসতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত করার কারণে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ...

‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাবে সরকার’

ঢাকা অফিস আগামী ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় কোটা অনুযায়ী সকল কর্মী পাঠাতে হবে। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর...

আরও ৫২ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি

ঢাকা অফিস দলীয় নির্দেশনা না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সারা দেশে দফায় দফায় নেতাদের বহিষ্কার করছে বিএনপি। এবার তৃতীয় ধাপের...

নির্বাচন ইস্যু পেছনে ফেলে সামনে তাকাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র : লু

ঢাকা অফিস বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত করার লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন...
- Advertisement -spot_imgspot_img

অস্ত্র-গ্রেনেড ও রকেট সেলসহ আরসার দুই সন্ত্রাসী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ‘লাল পাহাড়’ নামে পরিচিত দুর্গম পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরাকান রোহিঙ্গা...

মানবপাচার ঠেকাতে বাংলাসহ কয়েকটি ভাষায় প্রচারণা রোমানিয়া কর্তৃপক্ষের

ডেস্ক রিপোর্ট মানবপাচার ঠেকাতে বাংলা ও নেপালিসহ মোট পাঁচটি ভাষায় প্রচারণা শুরু করেছে রোমানিয়ান ন্যাশনাল এজেন্সি এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন...

Must read

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অভাবে ঝুঁকির মুখে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

ডেস্ক রিপোর্ট যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় আসতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত করার...

‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাবে সরকার’

ঢাকা অফিস আগামী ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় কোটা অনুযায়ী সকল...
- Advertisement -spot_imgspot_img

You might also likeRELATED
Recommended to you