ঢাকা অফিস
ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম আইডির নিরাপত্তা দুর্বলতা ঠিক করে দেওয়া, হ্যাক হওয়া আইডি উদ্ধার করে দেওয়ার নামে নিজেরাই বিভিন্ন ব্যক্তির আইডির নিয়ন্ত্রণ নিতো। পরে আইডির ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিতো টাকা। এ ছাড়া আইডিতে যুক্ত থাকা প্রবাসীর স্বজনদের কাছে ম্যাসেজ দিয়ে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে টাকা আদায় করতো তারা।
এভাবে প্রবাসীদের ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান নিজ কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শামীম আহমেদ জয় এবং মোহাম্মদ স্বাধীন আহমেদ। এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত শামীম আহমেদ জয় এবং স্বাধীন আহমেদকে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিল্যান্সার ও ফেসবুক বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রতারণার করে আসছিল গ্রেপ্তারকৃত এই দুই সহোদর। তাদের টার্গেটে থাকতো ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এক কানাডা প্রবাসীর ৮ হাজার ৫০০ কানাডিয়ান ডলার আত্মসাতের ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর ডেমরা থেকে এ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি জানান, এ সময় তাদের কাছ থেকে হ্যাকিংয়ে ব্যবহৃত ১টি সিপিইউ, ২টি মোবাইল ফোন, ১টি রাউটার ও ১২টি ভুয়া এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছে প্রায় ৫০০ ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া যায়।
তাদের অপরাধের কৌশল সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত শামীম আহমেদ জয় একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে হ্যাক হওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজ করতো। পরে ২০২৩ সাল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ঐ অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা পরিচিত ব্যক্তিদের মেসেঞ্জারে ‘আমার মা স্ট্রোক করেছে। জরুরি টাকা দরকার। ৩০০০ ডলার পাঠাও’- এ ধরনের সব বার্তা পাঠিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা শুরু করে।
হ্যাক করা অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেও আদায় করা হতো অর্থ। এমনকি হ্যাক করা আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণ-স্পর্শকাতর তথ্য, ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতো।
প্রতারণার স্বীকার হয়ে ভুক্তভোগীরা অস্ট্রেলিয়া থেকে রেমিটলি এবং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ট্যাপট্যাপ -এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ভুয়া এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল ফাইনান্সিয়্যাল সার্ভিসের নাম্বারে অর্থ প্রেরণ করতো। পরে দূরবর্তী স্থান ঘুরে ঘুরে আত্মসাৎ করা অর্থ উত্তোলন করতো স্বাধীন আহমেদ।
সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, শামীমকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের প্রায় ৫০০ ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া গেছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই হ্যাকারের টার্গেট। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শামীম। প্রত্যেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বনিম্ব ১০০০ হাজার ডলার নিতো সে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা হ্যাকারদের এমন প্রতারণা থেকে বাঁচতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যথাযথ সিকিউরিটি সেটিংস ব্যবহার করা, জরুরি প্রয়োজনের কথা কেউ বলে টাকা চাইলে সেটা যাচাই করা, কোন স্পর্শকাতর তথ্য, ছবি-ভিডিও শেয়ার ও সংরক্ষণ না করা, সাইবার স্পেসে অপরিচিত কোন আইডি থেকে প্রেরিত কোন লিংকে প্রবেশ না করা এবং অপরিচিত কোন আইডির সঙ্গে বন্ধুত্ব না করার পরামর্শ দিয়েছেন।