আমিরাত প্রতিনিধি:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ‘ব্যবসায়িক অংশীদারের কাছে প্রতারিত হয়ে ও ঋণের চাপে’ এক প্রবাসী বাংলাদেশি আত্মহত্যা করেছেন।
তার নাম শিবলী সাদিক বাপ্পি (৩৮), তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার বাঞ্ছানগরবাসী মোহাম্মদ হারুনুর রশীদের ছেলে। রোববার ভোরে আবুধাবিতে তিনি তার বাসস্থান আল মারিয়া সিনেমাহলের পেছনে ইকবাল রেস্টুরেন্ট বিল্ডিং-এর ছয়তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, আবুধাবি প্রবাসী মোহাম্মদ শিবলী সাদিক দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন আগে দেশ থেকে ঋণ নিয়ে এখানে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। সাম্প্রতিক তার ব্যবসায়ীক পার্টনার রিয়েল এস্টেট এ বিনিয়োগ করা সকল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঋণের চাপ ও পার্টনার কর্তৃক প্রতারিত হয়ে ডুবে যান হতাশার বেড়াজালে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আর কোন কূলকিনারা না পেয়ে বেঁছে নিলেন আত্মহত্যার পথ।
আত্মহত্যা করা নিহত প্রবাসী মোহাম্মদ শিবলি সাদিক (৩৮) লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের বাঞ্ছানগর গ্রামের মৃত হারুন উর রশিদের ছেলে।
নিহতের প্রতিবেশী চাচাতো ভাই মোহাম্মদ মনির বলেন, শিবলি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার ব্যবসায়ী পার্টনার রিয়েল এস্টেট এ বিনিয়োগ করা সকল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় হতাশয় ভুগছিলেন তিনি। পরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহননের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নেন শিবলি। এখন পর্যন্ত মৃতের ব্যবসায়ী পার্টনার প্রতারকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিহতের ব্যবসায়িক বন্ধু আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, গত ১৫ বছর ধরে বাপ্পি সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করছিলেন এবং ফিলিপাইনের এক নাগরিকের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আবাসন ব্যবসা করতেন।
সম্প্রতি ব্যবসার জন্য তিনি দেশ থেকে টাকা আনেন এবং স্থানীয়ভাবে ধারকর্জ করেন। এরই মধ্যে তার ফিলিপিনো অংশীদার আত্মগোপন করলে দেনার দায়ে পড়েন বাপ্পি। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
ইউসুফ জানান, ওইদিন রাতে বাপ্পির সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। সেসময় তাকে কিছুটা বিমর্ষ শোনাচ্ছিল। তিনি ইউসুফকে ফোন কেটে দিতে অনুরোধ করে বলেন, তিনি ক্লান্ত এবং ঘুমাবেন।
রোববার সকালে দেশ থেকে বাপ্পির স্ত্রী বারবার চেষ্টা করেও ফোনে স্বামীকে না পেয়ে ইউসুফকে খবর নিতে বলেন। ইউসুফ বাপ্পির আবাসস্থল আবুধাবি হামদান স্ট্রিটের ইকবাল রেস্টুরেন্ট বিল্ডিং-এ এসে সন্ধান করতে গিয়ে বিল্ডিং-এর চৌকিদারের কাছ থেকে জানতে পারেন, ভোরে বাপ্পি দালান থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি আরও জানান, মৃত শিবলী একই গ্রামের মো. আবুল কাশেমের মেয়ে তানজিনা আফরিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে নিঃসন্তান ছিলেন তিনি।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দূতাবাস আবুধাবিতে নিযুক্ত শ্রম কাউন্সিলর লুৎফুন নাহার নাজিম বলেন, মৃত্যুর খবর আমারা জেনেছি। মরদেহ এখন বানিয়াছ এর কেন্দ্রীয় মর্গে রয়েছে।
দেশটির আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহতের মরদেহ দেশে পৌঁছাতে দূতাবাস দ্রুত পদক্ষেপ নিবে এবং প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস তৈরির বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।